ঠিক হয়েছিল কিছুটা আচমকা ভাবেই, বা বলা যায় খুব কম চিন্তা-ভাবনার মধ্যে দিয়ে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে। শুধু মোটামুটি জানতাম ট্রেক রুট্টা কি, কিছু necessary information like পোর্টার কোথায় পাওয়া যায়, ট্রেকের ওয়ে-পয়েন্টস কি, কিছু তথ্য বাকি আন্দাজ IndiaMike ঘেঁটে। আমরা তিনমূর্তি, মোটামুটি সকলেই আনকোরা ট্রেকের ব্যাপারে, কিন্তু বুকে অফুরান্ত উৎসাহ আর উদগ্র বাসনা একটা ট্রেক করবার – এই ছিল আমাদের সম্বল। অনলাইন আর্টিকেল ঘেঁটে এইটুকু বুঝেছিলাম যে শুরু হিসাবে সান্দাকফু একটা ভালো অপশ্ন হতে পারে, যেটা আমাদের রিচে্র মধ্যেও আছে, অতোটা কঠিনও নয়, আর অনেক new-comer ই করে থাকে। তাই মনে অনেক আকাঙ্খা আর উৎসাহ নিয়ে আমরা এই ট্রেকের পরিকল্পনা করতে শুরু করলাম। সে সময় উৎসাহ এতটাই ছিল যে আমরা সান্দাকফুর-ও ওপরে ফালুট পর্য্যন্ত যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম।
অ্যাকাউন্টিং ইয়ারের শুরু তখন সবে। ১৮ই এপ্রিল আমাদের যাত্রা শুরুর দিন ঠিক হল। অফিস থেকে আমি এবং আমার সহকর্মী অয়ন দাসগুপ্ত, বাইরে থেকে আমাদেরই এক্স-কলিগ শমিক গুহ মজুমদার – এই নিয়ে তৈরি হল আমাদের তিনমূর্তির দল। আমাদের প্রথম গন্তব্য শিলিগুড়ি পর্য্যন্ত ভলভো বাসের টিকিট শমিক এসপ্লানেডে গিয়ে কেটে আনল। আমার বা অয়নের সৌভাগ্যক্রমে অফিস থেকে ছুটি পেতেও খুব একটা অসুবিধা হল না।
gap
অবশেষে নির্ধারিত দিনে ১৮ই এপ্রিল, ২০১১ এ আমরা তিনমূর্তি মহা উৎসাহের সাথে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। পুঁজি বলতে ছিল কুড়িয়ে পাওয়া কিছু জ্ঞান, একটা করে রুকস্যাক, আর পকেটে শিলিগুড়ি পর্য্যন্ত বাসের টিকিট।
(জ্ঞানের থেকে অজ্ঞানতাটা এতটাই বেশী ছিল যে আমার মা আমার রুকস্যাকে একটা কম্বল পর্য্যন্ত গুঁজে দিয়েছিল, যেটা পরবর্তী সময়ে গিয়ে কতটা মাথাব্যথা আর আফসোসের কারন হয়েছিল বুঝেছিলাম।)
আমি আর অয়ন অফিস থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে অফিসের অদূরবর্তী করুণাময়ী থেকে বাসে উঠলাম। করুণাময়ী থেকেই বাসটা ছাড়ে তাই আমরা ওখান থেকেই ওঠার সিদ্ধান্ত নিলাম, এতে অফিসের কাজও করে বেরোতে পারলাম, শমিক এসপ্লানেড থেকে ওঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গন্তব্য নিশ্চিন্তিপুর, শিলিগুড়ি; যেখানে শমিকের মামার বাংলো টি-গার্ডেনের মধ্যে। উঁনি ওই গার্ডেনের ম্যানেজার। পূর্বনির্ধারিত প্ল্যান অনুযায়ি উঁনিই গাড়ির ব্যাবস্থা করে রাখবেন ঠিক হয়েছিল আরো আগে যাওয়ার জন্যে।
আমাদের itinerary ছিল মোটামুটি এরকমঃ
Day 1 – শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা
Day 2 – মানেভঞ্জ অথবা ধুতরে অব্দি পৌঁছানো
Day 3 – প্রথম দিনের ট্রেক, টুম্বলিন অব্দি পৌঁছানো
Day 4 – দ্বিতীয় দিনের ট্রেক, কালাপোখরি পৌঁছানো
Day 5 – তৃতীয় দিনের ট্রেক, সান্দাখফু পৌঁছানো
Day 6 – চতুর্থ দিনের ট্রেক, ফালুট পৌঁছানো
Day 7 – গোর্খেতে নেমে আসা এবং এক রাত্রি কাটানো
Day 8 – রিম্বিকে নেমে আসা
gap
যাত্রা শুরু হল বেশ ভালো ভাবেই, তিনজনেই খোশ মেজাজে এবং মহা উৎসাহের সাথে। উৎকণ্ঠা ছিল নতুন অভিজ্ঞতা পাওয়ার, নতুন জিনিষ দেখার, সচরাচর জীবনযাত্রা থেকে বেরিয়ে আসবার। মাঝ রাত্রে বৃষ্টি হল (কালবৈশাখীর সাথে), ঘন কালোর মধ্যে দিয়ে বৃষ্টিভেজা হাইওয়ে মাড়িয়ে ছুটে চলল আমাদের বাস। আমরাও কখন ক্লান্তি আর অন্ধকারের মধ্যে যে যার আরামদায়ক সীটে ঢলে পড়লাম। শুধু বাসের ঢুলুনি আমাদের সঙ্গী হয়ে রইল।
গভীর রাতে বুঝলাম বাস আমাদের কোথাও থেমে গেছে। বাইরে কালো অন্ধকার, নিঝুম অন্ধকার গাড়ির মধ্যেও, চোখে ঘুম থাকার জন্য উঠে দেখার বা জানার ইচ্ছাও হল না কেন বাস দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু বুঝতে পারলাম বাস দাঁড়িয়েই আছে।
ধুলিয়ান বলে একটি জায়গা যেখানে আমাদের বাসের গতি রুদ্ধ হয়েছিল। ভোর রাত্রে বাস থেকে বেরিয়ে বুঝলাম বিশাল লম্বা লাইনের মধ্যে আমরা আটকে আছি, যার সামনে গাড়ি পেছনেও গাড়ি এবং সবাই স্থির, যাত্রীরাই শুধু বেরিয়ে এসেছে, ইতি-উতি চাইছে বোঝার চেষ্টা করছে ঘুম চোখে। লম্বা রাস্তায় না এপাশ থেকে কোন গাড়ি ওপাশে যাচ্ছে বা ওপাশ থেকে এপাশে। শুনলাম রাত দু’টো থেকে আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটা বড় এবং ছোট ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে অপেক্ষাকৃত পাতলা হাইওয়ে আড়াআড়ি ভাবে সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে গেছিল।
এরপর বহুক্ষন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আমাদের। এক প্রবল অসহায়তায় আমরা আমাদের হাত কামড়াচ্ছিলাম, আমরা বুঝতে পারছিলাম যত দেরী হবে আর আমরা শিলিগুড়ি পৌঁছাব ততই আমাদের schedule -এর ওপর তার প্রভাব পড়বে। আমাদের আজকেই শিলিগুড়ি ছেড়ে মানেভঞ্জর দিকে প্রস্থান করার কথা; আর দিন গড়িয়ে যাচ্ছে।


দীর্ঘ ৬ ঘন্টা আটকে থাকার পর অবশেষে ৮ঃ৩০ নাগাদ যানবাহন আবার সচল হল। তাও অত্যন্ত স্লথ গতিতে, ক্রেন এসে ভিড় ঠেলে ট্রাকের ধ্বংসাবশেষ সরানোর পরে। আমরা তখন বুঝে গেছিলাম আমাদের আজকের পূর্বনির্ধারিত প্ল্যান কার্য্যকর করা কতটা শক্ত।
এরপর আরো দীর্ঘক্ষনের একঘেয়ে বাস যাত্রার পর আমরা শিলিগুড়ি এসে পৌঁছলাম, তখন দুপুর ২ঃ৩০। আগেই ফোন করে শমিক জানিয়ে দিয়েছিল ওর মামাকে রাস্তার পরিস্থিতির সম্বন্ধে এবং অগত্যা শুনলাম সেদিনের যাত্রাটা (মানেভঞ্জ-এর দিকে) পরবর্তী দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
gap
মাটিগাড়া খাপরাইল মোর, শিলিগুড়ি, আমরা যখন এসে পৌঁছালাম তখন মাঝ দুপুর হওয়া সত্বেও রোদে সেরম তেজ ছিল না, দূষনমুক্ত পরিষ্কার আবহাওয়া আমাদের স্বাগত করল। শমীকের মামা একটা বোলেরো নিয়ে এসেছিলেন আমাদের নিয়ে যাবার জন্য। সেখান থেকে আমরা চললাম ওঁনার বাংলোর উদ্দেশ্যে।
নিশ্চিন্তিপুর জায়গাটা বেশ সুন্দর। টি-গার্ডেনের মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা ধরে আমরা বাংলোর সামনে এসে উপস্থিত হলাম। কাঠের বেশ সুন্দর বাংলো শমীকের মামার। বাংলোর পাশেই একটা বিশাল চা কাটিংয়ের ফ্যাক্টরিও ছিল, যেটা সেমুহূর্তে বন্ধ ছিল। আমরা এতই ক্লান্ত ছিলাম বেশী এদিক ওদিক না করে মামির বানিয়ে রাখা লাঞ সেরে এদিক ওদিক বিশ্রাম নিলাম।
এখানে অন্ধকার তাড়াতাড়ি নেমে আসে, নিঝুম দুপুরে কাঠের ঘরের ড্রইং রুম মোটা পর্দার জন্য শিগগিড়ি আধা অন্ধকার মত হয়ে গেল। আমি আর অয়ন আমাদের ব্যাগপত্রের মধ্যেই দু’টো প্রমান সাইজের গদি চেয়ারের মধ্যে গা ছেড়ে দিলাম। শমীক ভেতরের ঘরে কোথাও আস্তানা নিল। কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম খেয়াল নেই।

বিকালে ঘুম ভাঙতে আমরা চারদিকটা একটু ঘুরে বেড়িয়ে দেখতে বেরলাম। মামার মেয়ে আমাদের সঙ্গী হল এবং পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। যদিও শমীকেরো মোটামুটি জায়গা পরিচিত ছিল বোঝা যাচ্ছিল। দিনের শেষ আলোতে আমরা হেঁটে চললাম।


আমরা টি-গার্ডেনের আল ধরেও অনেক ঘুরলাম, কিন্তু ততক্ষনে অন্ধকার নেমে এসেছিল।

সন্ধেবেলায় আমরা গাড়ি করে শমীকদেরই কোন এক আত্মীয়র বাড়ি দিয়ে ঘুরে আসলাম। রাত্রে মামির হাতের ভালো রান্না খেয়ে সব বিছানায় গা ছেড়ে দিলাম। কাল সকালে আমাদের নিয়ে যাবার জন্যে গাড়ি আসবে।
ক্রমশঃ..
দারুন হচ্ছে .. তাড়াতাড়ি পরের টা পোস্ট কর !!!!
— দীপ্তিমান
LikeLike
Thank you! দীপ্তিমান। খুব শিগগিরিই )
LikeLike
Hi Santanuda ….Great blog and I look forward to checking out the more n more articles.I have read all of this and still think you’ve missed the best tour picture (Simla Kulu Manali) out there! keep up the good work!
LikeLike
Thank you Pubali! Well, Shimla-Manali trip was a decades ago.. Even still remember something but not enough ingredients to write down the incidents we enjoyed there ) So, better I kept them in memory and in my 500px page. Well thank you! Watchout Sandakphu-III coming shortly 😉
LikeLike
দারুণ
LikeLike
ধন্যবাদ দেবজ্যোতি! 🙂
LikeLiked by 1 person